এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ও হুয়াওয়ের আয়োজিত ‘স্ট্র্যাটেজি ফর অ্যাড্রেসিং দ্য এশিয়া প্যাসিফিক ডিজিটাল ড্রাইভ-ইনক্রিজিং কানেক্টিভিটি টু ড্রাইভ ইকোনোমি রিকোভারি’ শীর্ষক সেমিনারে এ আহ্বান জানান তারা।
গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ কমাতে ও ডিজিটাল শিক্ষার বিকাশে সকল খাতের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন; যা বৈশ্বিক মহামারিকালীন সময়ে ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাসে ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ থাইল্যান্ডে ‘প্রাইম মিনিস্টার অ্যাওয়ার্ড’ পেলো হুয়াওয়ে
হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের চিফ ডিজিটাল অফিসার মাইকেল ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘এটা শুরুই হবে যারা এখনও ডিজিটাল মাধ্যমে সংযুক্ত নয়, তাদের সংযুক্ত করার মাধ্যমে।’
তিনি এ অঞ্চলে ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে তিনটি প্রধান স্তম্ভকে একত্রিত করে হুয়াওয়ের এজেন্ডা তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলোআইসিটি সংযোগ, দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা ও সবুজ প্রযুক্তি।
সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্টাই কলেজ অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ইয়িন হাইতাও এর বক্তব্যেও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব উঠে এসেছে। সম্প্রতি, তার অর্থনৈতিক বিকাশ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে আইসিটি সমাধান ব্যবহারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রফেসর ইন ও কর্নেল ইউনিভার্সিটির স্যামুয়েল সি জনসন কলেজ অব বিজনেসের প্রফেসর ক্রিস মারকুইস ‘ডিজিটাল ইনভলবমেন্ট অ্যান্ড প্রোভার্টি অ্যালেভিয়েশন: এ হুয়াওয়ে অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটির সহ-রচয়িতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুরালস্টার প্রোগ্রামের লক্ষ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে আইসিটি ব্যয় হ্রাস করা, যাতে স্থানীয় ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে টেকসই ডিজিটাল সংযোগ সেবা সরবরাহ করতে সক্ষম হন।
অনুন্নত অঞ্চলে পৌঁছাতে ও ডিজিটাল কভারেজ উন্নত করতে হুয়াওয়ে ২০১৭ সাল থেকে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বব্যাপী স্থানীয় অপারেটরদের সাথে রুরালস্টার প্রোগ্রাম শুরু করে। এ সমাধানটি আগের টাওয়ারগুলোর পরিবর্তে সাধারণ টাওয়ার প্রতিস্থাপন করে এবং ডিজেল জেনারেটর শক্তি থেকে সৌরবিদ্যুতে স্থানান্তরিত করে। ২০২০ সালের মধ্যে, ৬০টিরও বেশি দেশে রুরালস্টার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল এবং ৫ কোটি মানুষ এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হয়েছে।
ডিজিটাল বৈষম্যের অন্যতম মূল কারণ আইসিটি সংশ্লিষ্ট প্রতিভার সঙ্কট। ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ সম্পর্কে হুয়াওয়ের কৌশলের সাথে সহমত হওয়া ছাড়াও শ্রম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইনের (এসইউটিডি) লি কুয়ান ইইউ সেন্টার ফর ইনোভেটিভ সিটির পরিচালক পুন কিং ওয়াং মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ও সময়পোযোগী করতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও টেকসই সহযোগিতা এবং ডিজিটাল রূপান্তরে শ্রমিকদের সুস্থতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা ।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের ইকোনোমিক প্রোগ্রামের পরিচালক সোফিয়া শাকিল নারী বেকারত্বের ওপর মহামারির নেতিবাচক প্রভাব এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
২০১৭ সালে হুয়াওয়ে, বাংলাদেশ সরকার (আইসিটি বিভাগ) ও রবি আজিয়াটা যৌথভাবে দেশের গ্রামীণ পর্যায়ের কেন্দ্রে নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধিতে ডিজিটাল ট্রেনিং বাস প্রকল্প চালু করে। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি নারী এখান থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং ২০২৩ সালের মধ্যে আরও ১ লাখ ৬০ হাজার জন এর থেকে উপকৃত হবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মাইকেল ম্যাকডোনাল্ডের মতে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আসন্ন শ্রম ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য হুয়াওয়ের শিক্ষা বিষয়ক ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে আরও ৪ লাখ ডিজিটাল দক্ষ ব্যক্তি তৈরি হবে হবে আশা করা যায়। এমন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সিডস ফর দ্য ফিউচার, আসিয়ান অ্যাকাডেমি ইত্যাদি।
সেমিনারে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকার, সংশ্লিষ্ট খাত, তৃতীয় পক্ষের চিন্তাশীল নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে একসাথে ইকোসিস্টেম তৈরির বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।